মাকড়সা রেশমের রহস্য উদঘাটন
মাকড়সার জাল থেকে তৈরি রেশম কেন এত শক্ত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি অভিনব এই উপাদানের নির্মাণশৈলী সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা। জার্মানির ‘হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট অফ থিয়রিটিক্যাল স্টাডিজ’ এর বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তারা মাকড়সার জালের রেশমের গোপন রহস্যটি উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন। ‘বায়োফিজিক্যাল’ পত্রিকার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় এই গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে।
মাকড়সার জালের সুতা অত্যন্ত মজবুত এবং একইসঙ্গে ইলাস্টিক বা প্রসারণ যোগ্য। তাই এর কারণ বের করতে বিজ্ঞানীদের অনেকদিনের প্রচেষ্টা। এখন বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, প্রকৃতির এই গুরু রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন তাঁরা। বলছেন, মাকড়সা থেকে তৈরি রেশমের সূক্ষ্ম গঠন সম্পর্কে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
গবেষণার অন্যতম গবেষক ফ্রাউকে গ্রেটার সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, ‘‘এই প্রাকৃতিক তন্তুর গঠনগত বৈশিষ্ট্য খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। এই গবেষণা এই তন্তুর গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা ইস্পাতের সঙ্গে এই তন্তুর দৃঢ়তার তুলনা করেন। বলেন, এটি টায়ারে ব্যবহৃত সিনথেটিক তন্তু কেভলারের চেয়ে শক্ত। অন্যদিকে এর ঘনত্ব সুতি বা নায়লনের চেয়ে কম।
ফ্রাঙ্কফুর্ট’এর সেংকেনব্যার্গ রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর অ্যারাকনোলজি বিভাগে মাকড়সা জাতীয় প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। বিভাগের প্রধান পেটার ইয়েগার বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মাকড়সার রেশম তৈরির কৌশল জানতে সাহায্য করছে, যা তন্তু তৈরির কারখানায় ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা এই গঠনশৈলী কৃত্রিম রেশম তন্তুর উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে। জার্মানির একটি বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন, এরকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, মাকড়সার তন্তুতে মূলত দু’টি প্রধান উপাদান দেখা যায়। একটি উপাদান নরম এবং এর কোন নির্দিষ্ট আকার নেই। অন্যটি শক্ত এবং অতি স্বচ্ছ৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর নরম উপাদানটি রেশমের স্থিতিস্থাপকতায় কাজ করে। যেখানে স্ফটিক স্বচ্ছ উপাদানটি এই তন্তুকে শক্ত করে তোলে।
মাকড়সার তন্তু
সত্যিই কি সুপারহিরো এবার সভ্যতা বাঁচাবে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে বিপদাপন্ন মানুষ। কিন্তু স্বপ্ন থমকে দাঁড়ায়। ইস্পাতাতীত দৃঢ় আর নাইলনাতীত নমনীয় তন্তু যে শিল্পকারখানায় তৈরি করা যাবে না। তবু স্বপ্ন ভাঙে না মুক্তিকামী মানুষের। ওরা (সুপারহিরোরা) আসবে বলে তাই, তারা পথ চেয়ে রয়।
স্বপ্ন জিইয়ে রাখে মাকড়সা
মাকড়সা আর্থ্রোপোডা পর্বের অষ্টপদী (চার জোড়া) প্রাণী। এরা সঞ্চিত শক্তি ব্যবহার করে কমপক্ষে আটবার পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সক্ষম। কখনও সখনও পঞ্চাশবার ব্লাডপ্রেসার বাড়িয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ জোড়া পা দিয়ে এরা লাফও দিতে পারে। এদের দেহের সেরিবেলামে চার হাজারের মতো স্পাইগট থাকত। স্পাইগটদের কাজ ছিল ফেব্রিক তৈরি আর পোকামাকড়দের জালে জড়ানো। বহু বছরের বিবর্তনে মাকড়সার রেশম বা তন্তু বর্তমানের চটচটে তরল দ্বারা আবৃত্ত। স্পাইগটের কাজ এখন তন্তুই করে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন মাকড়সার তন্তুর গঠন ও প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে। এতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে অক্সফোর্ড সিল্ক গ্রুপ। তারা আত্মবিশ্বাসী যে এই গবেষণা, আইসিসের নতুন টার্গেট স্টেশনে রহস্য উন্মোচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। আইসিস হল ইন্টারন্যাশনাল স্যাটেলাইট ফর আয়নোস্ফেরিক স্টাডিজ, যা পৃথিবীর আয়নমণ্ডল গবেষণার জন্য একটি কানাডিয়ান স্যাটেলাইট সিরিজ। এ সিরিজে এ পর্যন্ত চারটি কৃত্রিম উপগ্রহ উড্ডয়ন করা হয়েছে। আলোতি-১ ও আলোতি-২ এরপর ১৯৬৯ সালে ৩০ জানুয়ারি আইসিস-১ এবং ১ এপ্রিল ১৯৭১ আইসিস-২ উেক্ষপণ করা হয়। এগুলোকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এবং ডেল্টা রকেটের মাধ্যমে উেক্ষপণ করা হয়। অক্সফোর্ড সিল্ক গ্রুপের অন্যতম বিজ্ঞানী ড. ক্রিস হল্যান্ড জানান, মাকড়সার তন্তু গবেষণায় তারা আইসিস-২ ব্যবহার করবেন। বায়োপলিমার ও প্রোটিনের ছবি নেওয়ার জন্য এতে যোগ করা হয়েছে নতুন টার্গেট স্টেশন।
রেশমের রসায়ন
মাকড়সারা জাল বুনতে ও তন্তু উত্পন্ন করতে সাত ধরনের ভিন্ন প্রকৃতির প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করতে পারে। মাকড়সার তন্তুগ্রন্থির ভেতরে জেলির মতো এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে। এদের বলা হয় ডোপ। এ ডোপ থেকেই মাকড়সারা সুতা তৈরি করে। মূলত ডোপ হল জল ও জলে দ্রবণীয় প্রোটিনের মিশ্রণ, প্রবাহের সময় যারা গলিত পলিমার হিসেবে কাজ করে। যখন তা তন্তুগ্রন্থির ভেতর দিয়ে গমন করে তখন কঠিন বা দৃঢ় হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা জানেন, ডোপের উপাদান কী কী। তারা এর ভারসাম্য এবং কীভাবে তাদের তন্তু গ্রন্থি গঠিত, তা জানেন। তাহলে আমরা কেন পারব না মাকড়সার মতো আদর্শ শিল্প নৈপুণ্যের পোশাক বানাতে? সাহস করে বলছিলেন ড. হল্যান্ড। মাকড়সার ডোপের মতো তাতে স্ফটিক অবস্থান প্রাপ্তির জন্য দরকারি সব শর্ত জোগান দিচ্ছেন হল্যান্ড ও তার দল। এর জন্য তারা সহযোগিতা পাচ্ছেন আইসিস-২ এর নতুন টার্গেট স্টেশন থেকে। স্বাভাবিক এবং তন্তুগ্রন্থির ভেতর দিয়ে প্রবাহের সঙ্গে উভয় প্রকৃতিতে ডোপের প্রোটিন ও অন্যান্য উপায় পরিমাপ ও পরীক্ষণে ব্যবহূত হচ্ছে আইসিস-২। তন্তু কাটতে মাকড়সারা কী ধরনের পরিবেশ তৈরি করে, পর্যবেক্ষণ করছে হল্যান্ডের দল। যদি জলে রেশমে প্রোটিন দ্রবণ পাওয়া যায়, তবে জানা যাবে কী কাঠামোয় তারা আছে এবং জানা যাবে কীভাবে কাঠামো পাল্টাচ্ছে প্রবাহের সময়। কীভাবে রেশম পুঞ্জীভূত থাকে এটিই হল রহস্য মোচনের মূল চাবিকাঠি।
ডোপ টেস্টার লক
শুধু আইসিস-২ নয়, আইসিস-১ ব্যবহূত হচ্ছে এ গবেষণায়। আইসিস-১ এ ২০০ মিটার লম্বা নিউট্রন বিমের সূক্ষ্মাগ্র প্রান্তে ডোপের কয়েক ফোঁটা ছেড়ে দিয়ে লক (খঙছ) দিয়ে গবেষণা চলছে। লক হল ডোপের প্রোটিন ও অন্যান্য বায়োপলিম পরিমাপের যন্ত্র। মূলত এটি একটি সূক্ষ্মকোণী নিউটন বিচ্ছুরণ যন্ত্র। লকের পাশাপাশি প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদানের মতো রসায়ন জানতে গবেষকরা ব্যবহার করছেন রিয়োমিটার।
গুটিপোকার ডোপ
সরাসরি মাকড়সা ডোপ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয়েছে গুটিপোকার ডোপ। বস্তুত, গুটিপোকার রেশম মাকড়সার রেশম থেকে ভিন্ন। ‘কিন্তু প্রোটিন প্রবাহের পথ পরিক্রমা একই।’ গুটিপোকার ডোপ নেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করলেন ড. হল্যান্ড। এটি আমাদের জন্য সুসংবাদ, কারণ মাত্র কয়েকদিনেই একটি গুটিপোকা এক কিলোমিটার পরিধির রেশমগুচ্ছ নিঃসরণ করতে পারে। ফলে গবেষণার জন্য অনেক বেশি পরিমাণে রেশম পাওয়া যাচ্ছে, যা গুটিপোকার ডোপ ব্যবহারের অন্যতম যৌক্তিক কারণ। আইসিস-১ এর যন্ত্রবিজ্ঞানী ড. অ্যান টেরি পলিমারে স্ফটিকায়ন বৈশিষ্ট্য লাভের বিষয়টি গবেষণা করছেন। তবে আইসিস-২ এর দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি এবং হল্যান্ডের সহ-গবেষকরা। কারণ এতে থাকছে উচ্চ ফ্লাক্সের নিউট্রন বিম যা অপেক্ষাকৃত ২০ থেকে ৪০ গুণ উজ্জ্বল বায়োপলিমারকে পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশকও যেখানে উত্তম স্থানাঙ্কে রয়েছে। ড. টেরি এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, ‘আগে আমরা জানতাম না, সমস্যাটা কোথায় ছিল, কোনটা স্পিন করা হয় নাকি কীভাবে স্পিন করা হয়। গবেষণার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘টার্গেট স্টেশন-১ বলছে আমরা সঠিক পথে পা ফেলেছি, আর নিশ্চিত করবে টার্গেট স্টেশন-২।’
স্বপ্ন জিইয়ে রাখে মাকড়সা
মাকড়সা আর্থ্রোপোডা পর্বের অষ্টপদী (চার জোড়া) প্রাণী। এরা সঞ্চিত শক্তি ব্যবহার করে কমপক্ষে আটবার পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সক্ষম। কখনও সখনও পঞ্চাশবার ব্লাডপ্রেসার বাড়িয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ জোড়া পা দিয়ে এরা লাফও দিতে পারে। এদের দেহের সেরিবেলামে চার হাজারের মতো স্পাইগট থাকত। স্পাইগটদের কাজ ছিল ফেব্রিক তৈরি আর পোকামাকড়দের জালে জড়ানো। বহু বছরের বিবর্তনে মাকড়সার রেশম বা তন্তু বর্তমানের চটচটে তরল দ্বারা আবৃত্ত। স্পাইগটের কাজ এখন তন্তুই করে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন মাকড়সার তন্তুর গঠন ও প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে। এতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে অক্সফোর্ড সিল্ক গ্রুপ। তারা আত্মবিশ্বাসী যে এই গবেষণা, আইসিসের নতুন টার্গেট স্টেশনে রহস্য উন্মোচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। আইসিস হল ইন্টারন্যাশনাল স্যাটেলাইট ফর আয়নোস্ফেরিক স্টাডিজ, যা পৃথিবীর আয়নমণ্ডল গবেষণার জন্য একটি কানাডিয়ান স্যাটেলাইট সিরিজ। এ সিরিজে এ পর্যন্ত চারটি কৃত্রিম উপগ্রহ উড্ডয়ন করা হয়েছে। আলোতি-১ ও আলোতি-২ এরপর ১৯৬৯ সালে ৩০ জানুয়ারি আইসিস-১ এবং ১ এপ্রিল ১৯৭১ আইসিস-২ উেক্ষপণ করা হয়। এগুলোকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এবং ডেল্টা রকেটের মাধ্যমে উেক্ষপণ করা হয়। অক্সফোর্ড সিল্ক গ্রুপের অন্যতম বিজ্ঞানী ড. ক্রিস হল্যান্ড জানান, মাকড়সার তন্তু গবেষণায় তারা আইসিস-২ ব্যবহার করবেন। বায়োপলিমার ও প্রোটিনের ছবি নেওয়ার জন্য এতে যোগ করা হয়েছে নতুন টার্গেট স্টেশন।
রেশমের রসায়ন
মাকড়সারা জাল বুনতে ও তন্তু উত্পন্ন করতে সাত ধরনের ভিন্ন প্রকৃতির প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করতে পারে। মাকড়সার তন্তুগ্রন্থির ভেতরে জেলির মতো এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে। এদের বলা হয় ডোপ। এ ডোপ থেকেই মাকড়সারা সুতা তৈরি করে। মূলত ডোপ হল জল ও জলে দ্রবণীয় প্রোটিনের মিশ্রণ, প্রবাহের সময় যারা গলিত পলিমার হিসেবে কাজ করে। যখন তা তন্তুগ্রন্থির ভেতর দিয়ে গমন করে তখন কঠিন বা দৃঢ় হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা জানেন, ডোপের উপাদান কী কী। তারা এর ভারসাম্য এবং কীভাবে তাদের তন্তু গ্রন্থি গঠিত, তা জানেন। তাহলে আমরা কেন পারব না মাকড়সার মতো আদর্শ শিল্প নৈপুণ্যের পোশাক বানাতে? সাহস করে বলছিলেন ড. হল্যান্ড। মাকড়সার ডোপের মতো তাতে স্ফটিক অবস্থান প্রাপ্তির জন্য দরকারি সব শর্ত জোগান দিচ্ছেন হল্যান্ড ও তার দল। এর জন্য তারা সহযোগিতা পাচ্ছেন আইসিস-২ এর নতুন টার্গেট স্টেশন থেকে। স্বাভাবিক এবং তন্তুগ্রন্থির ভেতর দিয়ে প্রবাহের সঙ্গে উভয় প্রকৃতিতে ডোপের প্রোটিন ও অন্যান্য উপায় পরিমাপ ও পরীক্ষণে ব্যবহূত হচ্ছে আইসিস-২। তন্তু কাটতে মাকড়সারা কী ধরনের পরিবেশ তৈরি করে, পর্যবেক্ষণ করছে হল্যান্ডের দল। যদি জলে রেশমে প্রোটিন দ্রবণ পাওয়া যায়, তবে জানা যাবে কী কাঠামোয় তারা আছে এবং জানা যাবে কীভাবে কাঠামো পাল্টাচ্ছে প্রবাহের সময়। কীভাবে রেশম পুঞ্জীভূত থাকে এটিই হল রহস্য মোচনের মূল চাবিকাঠি।
ডোপ টেস্টার লক
শুধু আইসিস-২ নয়, আইসিস-১ ব্যবহূত হচ্ছে এ গবেষণায়। আইসিস-১ এ ২০০ মিটার লম্বা নিউট্রন বিমের সূক্ষ্মাগ্র প্রান্তে ডোপের কয়েক ফোঁটা ছেড়ে দিয়ে লক (খঙছ) দিয়ে গবেষণা চলছে। লক হল ডোপের প্রোটিন ও অন্যান্য বায়োপলিম পরিমাপের যন্ত্র। মূলত এটি একটি সূক্ষ্মকোণী নিউটন বিচ্ছুরণ যন্ত্র। লকের পাশাপাশি প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদানের মতো রসায়ন জানতে গবেষকরা ব্যবহার করছেন রিয়োমিটার।
গুটিপোকার ডোপ
সরাসরি মাকড়সা ডোপ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয়েছে গুটিপোকার ডোপ। বস্তুত, গুটিপোকার রেশম মাকড়সার রেশম থেকে ভিন্ন। ‘কিন্তু প্রোটিন প্রবাহের পথ পরিক্রমা একই।’ গুটিপোকার ডোপ নেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করলেন ড. হল্যান্ড। এটি আমাদের জন্য সুসংবাদ, কারণ মাত্র কয়েকদিনেই একটি গুটিপোকা এক কিলোমিটার পরিধির রেশমগুচ্ছ নিঃসরণ করতে পারে। ফলে গবেষণার জন্য অনেক বেশি পরিমাণে রেশম পাওয়া যাচ্ছে, যা গুটিপোকার ডোপ ব্যবহারের অন্যতম যৌক্তিক কারণ। আইসিস-১ এর যন্ত্রবিজ্ঞানী ড. অ্যান টেরি পলিমারে স্ফটিকায়ন বৈশিষ্ট্য লাভের বিষয়টি গবেষণা করছেন। তবে আইসিস-২ এর দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি এবং হল্যান্ডের সহ-গবেষকরা। কারণ এতে থাকছে উচ্চ ফ্লাক্সের নিউট্রন বিম যা অপেক্ষাকৃত ২০ থেকে ৪০ গুণ উজ্জ্বল বায়োপলিমারকে পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশকও যেখানে উত্তম স্থানাঙ্কে রয়েছে। ড. টেরি এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, ‘আগে আমরা জানতাম না, সমস্যাটা কোথায় ছিল, কোনটা স্পিন করা হয় নাকি কীভাবে স্পিন করা হয়। গবেষণার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘টার্গেট স্টেশন-১ বলছে আমরা সঠিক পথে পা ফেলেছি, আর নিশ্চিত করবে টার্গেট স্টেশন-২।’
রেশম পোকা দিয়ে মাকড়শার জালের সূতা
রেশম পোকা দিয়ে মাকড়শার জালের সূতা তৈরির গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন, নটরড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যালকম ফ্রেসার, উয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্রেইগ বায়োক্রাফট ল্যাবরেটরিজের বায়োকেমিষ্ট র্যা ন্ডি লুইস। চিকিৎসা ও চিকিৎসা বহির্ভূত খাতে উন্নত মানের রেশম সূতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ গবেষণা উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ম্যালকম ফ্রেসার। তিনি আরো বলেছেন, বস্তুবিজ্ঞান, অনেক দিন ধরেই মাকড়শার জালের সূতার গুণযুক্ত রেশম সূতা তৈরির চেষ্টা করে আসছে। এটি বিজ্ঞানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো। এমন কাজ কেনো বিজ্ঞানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে মাকড়শার জালের সূতার গুণাগুণের দিকে তাকালেই তা বুঝা যাবে।
এ ধরণের সূতার অসাধারণ কিছু গুণ আছে। মাকড়শা জাল তৈরির জন্য যে সূতা তৈরি করে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি রেশম সূতার প্রসারণ ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা তার চেয়ে অনেক বেশি। যে সব বিজ্ঞানী এ গবেষণা প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন, তারা বলেছেন, জিনের পরিবর্তন করে রেশম পোকার মাধ্যমে মাকড়শার জালের সূতা পাওয়া গেছে তার মধ্যে প্রাকৃতিক সব গুণই রয়েছে।
নতুন এ সূতা ব্যবহারের কথা বলতে যেয়ে তারা জানান, নতুন এই সূতা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্ষত স্থানে সেলাইয়ের কাজে চমৎকার উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিংবা ক্ষতস্থান মুড়ে দেয়ার জন্য উন্নতমানের ব্যান্ডেজ এ সব সূতা দিয়ে তৈরি করা যাবে। ট্যান্ডন বা লিগামেন্ট জোড়া দেয়ার কাজেও এ ধরণের সূতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এ ছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রের বাইরেও এ ধরণের সূতা ব্যবহারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ জাতীয় সূতা দিয়ে বুলেটপ্রুফ পোশাক তৈরি করা যাবে। যা হবে ওজনে হালকা কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত এ জাতীয় পোশাকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। এ ছাড়া এ সব সূতা দিয়ে মজবুত ও হালকা নানাধরণের কাঠামো বানানো যাবে। বানানো যাবে ক্রীড়াবিদদের জন্য নতুন জাতের পোশাক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন