রেশম শিল্পকে বাঁচাতে কার্যকর সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ
ও সাংবাদিকতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রেশম শিল্পকে কেন্দ্র করেই রাজশাহী নগরীর বিকাশ।
একসময় এ শিল্পের তৈরি ‘রাজশাহী সিল্কের’ মাঝে মানুষ খুঁজে পেত এ নগরীর পরিচয়। এটা
ছিল এখানকার প্রাচীন ঐতিহ্য ও নামকরা দেশি ব্র্যান্ড । কিন্তু কালের গর্ভে সেই
ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মুক্তবাজার
অর্থনীতির প্রভাব আর একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে মন্দা পড়েছে এ
শিল্পের। অবাধে বিদেশি সুতার আমদানির ফলে এ অঞ্চলের বসনীরা (তুঁতচাষী) ক্রমাগত
লোকসানের বোঝা টানতে টানতে রেশম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ক্রমাগত সুতার দাম
বৃদ্ধি, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত না হওয়ার ফলে কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে
যাচ্ছে। কিন্তু, সরকার নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন তো দূরের কথা, সম্ভবনাময় এ
খাতটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না।বর্তমানে রাজশাহীতে একটি সরকারি ও ছোট-বড় মিলিয়ে মোট
৭৫ টি বেসরকারি শিল্প কারখানা রয়েছে । কিন্তু লোকসানের বোঝা নিয়ে ৯ বছর আগে বন্ধ
হয়ে যায় সরকারি মালিকানাধীন রেশম কারখানাটি। একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটিও
বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এ দুটি কারখানা পুরোদমে চললে বছরে ৬ দশমিক ৪১ লাখ মিটার রেশম
কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব। যা দেশের বস্ত্রের চাহিদা মেটাতে বিরাট ভূমিকা রাখতে
পারতো।
আবার বৃহত্তর রাজশাহীতে যেসব শিল্প কারখানা রয়েছে
সেগুলোতে বছরে সুতার চাহিদা ২৫০ থেকে ২৬০ টন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বছরে সুতা তৈরি
হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টন। অর্থাৎ সুতার চাহিদা মেটাতে বর্তমানে ২০০ টনেরও বেশি সুতা
বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আগে চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন
দেশ থেকে সুতা আসতো। কিন্তু বর্তমানে শুধু চীন থেকে সুতা আসছে। অদূর ভবিষ্যতে চীনও
সুতা রপ্তানি বন্ধ করে দিবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদেশি সুতা আসা কমে
যাওয়ায় সুতার দাম দ্বিগুন-ত্রিগুন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার এই সুযোগেই বিদেশ থেকে
সিল্ক কাপড় আমদানি করা হচ্ছে। ট্যাক্স কম থাকাতেই কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী এই
সুবিধাগুলো নিচ্ছে। সর্বোপরি,দেশি সুতার সীমিত উৎপাদন, সুতা আমাদানি কমে যাওয়া, সিল্ক
কাপড় সহজে আমদানি ইত্যাদি কারণে রেশম সেক্টরে অশনি সংকেত বিরাজ করছে।
একসময় বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে
তুঁতচাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল। এ অঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার তুঁতচাষ, পুলপালন,
সুতা তৈরির সাথে জাড়িত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভালো ডিমের অভাব, বিদেশি সুতার
লাগামহীন অনুপ্রবেশের কারণে সুতার দাম কমে যায়। ফলে চাষীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
দেশের বাইরে রেশম চাষের ক্ষেত্রে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম,বুলগেরিয়া ব্যাপক উন্নতি
সাধন করেছে । তারা গুটিতেও উন্নয়ন করেছে। আমাদের দেশেও রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট
বিগত বছরগুলোতে রেশম চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন, তুঁত ও রেশম কীটের রোগদমন ব্যবস্থা সহ অনেক
উন্নত তুঁত ও রেশমকীটের জাত উদ্ভাবন করেছে । রেশম শিল্পের এবং সুতার উৎপাদন
বৃদ্ধিতে এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও রেশম বোর্ডের আমলা নির্ভর ও
প্রযুক্তি অজ্ঞ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবে উন্নত প্রযুক্তি ও জাত সমূহ মাঠ পর্যায়ে
কৃষকের হাতে পৌছাতে না পাড়ায় কৃষক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পাড়ছে না। এছাড়াও বিভিন্ন
সময়ে সরকার এর কিছু ভুল সিদ্ধান্ত (বিদেশী সুতার ট্যাক্স কমানো ও অন্যান্য) নেওয়ার
ফলে এ শিল্পের উন্নতি হচ্ছেনা ।তবে আশার কথা হল ব্র্যাক, প্রশিকা , কারিতাস
ইত্যাদি এনজিও এর মাধ্যমে কিছু কিছু নতুন প্রযুক্তি এবং উন্নত জাত(তুঁত ও রেশমকীট)কৃষকের
হাতে পৌছানো সম্ভব হয়েছে । কিন্তু বর্তমানে সরকার আবার রেশম বোর্ড , রেশম গবেষণা
ইন্সটিটউট এবং সিল্ক ফাউন্ডেশন কে একত্রিত করার যে ভুল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তা এ
শিল্পকে শেষ করার পথে আরও একটি মাইল ফলক হতে যাচ্ছে ।
রেশম চাষ একটি শ্রমঘন কৃষিভিত্তিক শিল্প। কৃষি
ও শিল্পের সমন্বয়ে রেশমের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে। এই পরিবেশবান্ধব শিল্প উন্নয়নের
জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একদিকে যেমন- তুঁতচাষ, রেশমপোকা পালন, গুটি উৎপাদন এবং
বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কৃষির পর্যায়ে পড়ে। অন্যদিকে থ্রোয়িং, রিলিং, টুইস্টিং বয়ন,
ছাপা এবং রেশম বস্ত্র ফিনিশিং ইত্যাদি শিল্প পর্যায়ভুক্ত। এছাড়া বিশ্ববাজারে রেশম
আজও অপ্রতিদ্বন্দী বস্ত্রসামগ্রী। তাই রেশম শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করলে দেশ
অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। এছাড়াও এ অঞ্চলের ৪০/৫০ হাজার এবং সারা দেশে প্রায় কয়েক
লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এজন্য এ সেক্টরের প্রতিটি স্তরে
স্তরে সৃষ্ট সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং উত্তরণের চেষ্টা চালাতে হবে। রেশম
শিল্পের উন্নয়নের জন্য অনতিবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। যেমন- রেশম চাষীদের বিনাসুদে
বা স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া, রেশমচাষের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, মানসম্মত গুটি উৎপাদন,
উন্নত ডিম সরবরাহ, উৎপাদিত গুটির দামের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা, এ শিল্পে নিয়োজিত বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠান কে সতন্ত্র রেখেই তাদের প্রতি সরকার এর নজরদারী
বৃদ্ধি করা, মানসম্মত সুতা উৎপাদন, সুতা চোরাচালান বন্ধ করাসহ পলুচাষীদের দিকে
বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এছাড়াও রেশম বোর্ড ও রেশম কারখানার প্রায় একশ’ একর জমি
রয়েছে; যা প্রতিনিয়ত দখলের চেষ্টা চলছে। এর আগে কারখানার বাইরের জায়গায় ‘গেইন
ট্যাক্স’ নামের উদ্ভট পদ্ধতিতে দখল করে সেখানে মাকের্ট তৈরি করা হয়েছে। এখনও জমি
দখলের পাঁয়তারা চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে এসব জায়গা পুনোরুদ্ধার এবং ভূমি সংরণের
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে রেশম শিল্প অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা রেশম কারখানাটি চালুর জন্য আন্দোলন করে আসছে। পে-অফকৃত শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কিন্তু মহাজোট সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্বেও বন্ধ শিল্প-কারখানাগুলো চালুর ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরকার তিন’বছর অতিক্রম করলেও রাজশাহীর কোন কারখানাই এখনো চালু করেননি; যা অত্যন্ত দু:খজনক। তবে মাননীয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গত ৪ জানুয়ারি এ কারখানাটি পরিদর্শন করেন। তিনি কারখানাটি চালুর ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকার কথা জানান। তিনি রেশম বোর্ড ও রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সাংসদের সাথে এ ব্যাপারে মতবিনমিয় করেন। এটা একটি ইতিবাচক দিক । কিন্তু শুধু কমিটি গঠন, পরিদর্শন, পদক্ষেপ নিলেই চলবে না। অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এ অঞ্চলের ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়োজনে লোকসান দিয়ে হলেও রেশম শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা রেশম কারখানাটি চালুর জন্য আন্দোলন করে আসছে। পে-অফকৃত শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কিন্তু মহাজোট সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্বেও বন্ধ শিল্প-কারখানাগুলো চালুর ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরকার তিন’বছর অতিক্রম করলেও রাজশাহীর কোন কারখানাই এখনো চালু করেননি; যা অত্যন্ত দু:খজনক। তবে মাননীয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গত ৪ জানুয়ারি এ কারখানাটি পরিদর্শন করেন। তিনি কারখানাটি চালুর ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকার কথা জানান। তিনি রেশম বোর্ড ও রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সাংসদের সাথে এ ব্যাপারে মতবিনমিয় করেন। এটা একটি ইতিবাচক দিক । কিন্তু শুধু কমিটি গঠন, পরিদর্শন, পদক্ষেপ নিলেই চলবে না। অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এ অঞ্চলের ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়োজনে লোকসান দিয়ে হলেও রেশম শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন