শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পশ্চিমবংগে নতুন বাজেটে অনিশ্চয়তায় বস্ত্র ও রেশম শিল্প

পশ্চিমবংগে নতুন বাজেটে অনিশ্চয়তায়  বস্ত্র ও রেশম শিল্প


কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন বস্ত্রশিল্প ও রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত কয়েক লক্ষ মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য বস্ত্রশিল্প শ্রমিক এবং রেশম চাষী বিপন্ন বোধ করছেন। এই নতুন বাজেট প্রস্তাবের প্রভাবে অনেক মানুষ তাদের কাজ হারাতে পারেন। এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ব্র্যান্ডের পোশাক এবং বস্ত্রশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ আবশ্যিক লেভির প্রস্তাব করেছেন। এর ফলে অনেকগুলি বড় ক্ষেত্র ছাড়াও ছোট পোশাক শিল্পগুলি এই করের আওতায় চলে আসবে। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক লক্ষ প্রান্তিক ও গরিব শ্রমিক। এই শিল্প সাধারণভাবে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ছোট এবং কুটির শিল্প। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এই বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য রয়েছে। সুতো এবং ফাইবারের দাম বাড়ার ফলে এই পোশাক শিল্প এখনই বেশ সঙ্কটের মধ্যে চলছে। তার ওপর এই বাধ্যতামূলক কর চাপানো হলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পর্যায়ের বস্ত্রশিল্পের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাড়তি কর চাপানোর সময় বস্ত্রশিল্পের এই গরিব শ্রমিকদের কথা ভাবার প্রয়োজন বোধ করেননি। এই বাজেটের রূপকার ইউ পি এ সরকারের শরিক মা মাটি মানুষের দল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বাজেট তৈরির সময় বা তার পরে বস্ত্রশিল্প শ্রমিকদের এই সমস্যার বিষয়টি একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রণব মুখার্জি ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। কিন্তু সেই আলোচনায় অনুপস্থিত পোশাক শিল্প ও রেশম চাষ। গরিব শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নন রেলমন্ত্রী। কৃষকদের স্বার্থের বিষয়ে সব সময়ই নাকি উদ্বিগ্ন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবের ফলে এরাজ্যের রেশম চাষীরা যে বিপদে পড়তে পারেন সে সম্পর্কে মাথা ঘামাতে চান না তৃণমূল নেত্রী। বাজেটে ‘র’-সিল্কের ওপর বহির্শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই শুল্ক কমানোর প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের স্বার্থ রক্ষা হবে। কিন্তু এই নতুন প্রস্তাব রেশম চাষে যুক্ত মানুষদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন করতে পারে। ‘র’-সিল্কের বহির্শুল্ক কমানোর প্রস্তাবে ভারতের বাজারে বিদেশের সস্তা সিল্ক ছেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে রেশম চাষে যুক্ত অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের সামনে দাঁড়াবে। এই প্রশ্নেও সম্পূর্ণ নীরব তৃণমূল নেত্রী। কৃষক দরদী মমতা ব্যানার্জিও রেশম চাষীর স্বার্থবিরোধী এই বাজেট প্রস্তাবের শরিক। পশ্চিমবঙ্গে বস্ত্র শিল্পের শ্রমিক ও রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত মানুষের স্বার্থে এই দুটি বাজেট প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

কংগ্রেস তার জনবিরোধী আর্থিক নীতি রূপায়ণ করার কাজে প্রকৃত শরিক পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সহযোগিতা নিয়েই কংগ্রেস তার জোট সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত বড়লোকদের স্বার্থে নীতিকে অব্যাহত রেখেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অধিকার করে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দ্বিতীয় ইউ পি এ জোট সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যেও রয়েছে তৃণমূল। এই সরকারের আমলে মূল্যবৃদ্ধির কোনো প্রতিকার নেই। বেড়ে চলেছে পেট্রোপণ্যের দাম। এই সরকারের আমলেই দুর্নীতি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এই সমস্ত নীতি ও কাজের শরিক তৃণমূল। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার জন্য তৃণমূল যে-কোনো প্রস্তাবই মেনে নিতে রাজি। বস্ত্রশিল্পের শ্রমিক ও রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের স্বার্থবিরোধী কাজেও তাই নিরুত্তর তৃণমূল নেত্রী। এইসব ঘটনা থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বুঝে নিতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকৃত পরিচয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন