শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রেশম শিল্পে কিসের সংকেত


রেশম শিল্পে কিসের সংকেত 

প্রাণচাঞ্চল্য হারাতে বসেছে চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্র সমকাল
নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই
বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত থাকার সময় করুণ অবস্থা ছিল রেশম শিল্পের। এ সময় বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী একাধিক রেশম কারখানা। তবে রেশম বোর্ড থেকে রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট পৃথক করার পরপরই পরিবর্তন হতে থাকে পরিস্থিতি। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা রেশম গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট কেন্দ্রকে ফের বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করতে একটি মহলের ষড়যন্ত্র করার খবরে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে রেশম শিল্পে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শত শত রেশম চাষি ও শ্রমিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে রেশম শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে রেশম চাষ সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ রেশম বোর্ড। তখন রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের অধীনে নেওয়া হয়। তবে বোর্ড প্রতিষ্ঠার আট-দশ বছরের মধ্যে দেশে রেশম উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে থাকে। দেশের রেশম শিল্পগুলো নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বিদেশি সুতার ওপর। বছরের পর বছর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার পর ২০০২ সালে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড বাধ্য হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী রেশম কারখানা ও ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ করে দিতে। ওই সময় বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের সৃজনশীল গবেষণার পরিবেশ ছিল না। অভিন্ন অবস্থা ছিল চন্দ্রঘোনা রেশম গবেষণা কেন্দ্রের। এটি পরিণত হয়েছিল কর্মচঞ্চলহীন এক সংস্থায়।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের রেশম শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা রেশম শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি সার্ভে করা হয়। বিশেষজ্ঞ দল রেশম বোর্ড থেকে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারেগপ্রই) পৃথক করার সুপারিশ করে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটিকে পৃথকী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আলোকে ২০০৩ সালে রেশম বোর্ড থেকে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট পৃথক করে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এর পরপরই বারেগপ্রইর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরে আসে। এতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা রেশম গবেষণা কেন্দ্রও। এ সংস্থার মাধ্যমে চলতে থাকে একের পর এক গবেষণা। এরই ধারাবাহিকতায় এখানে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় 'প্রজেক্ট অন সেরিকালচার রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজি ডেসিমিনেশন ইন হিলি ডিস্ট্রিক্টস্' নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মাঝে রেশম চাষ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করার পেছনে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ৭৫০ জন তরুণ-তরুণীকে রেশম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকার উপযোগী রেশম চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যায়ে হস্তান্তর, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিকরণ, গবেষণার মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় তুঁতজাত ও পলুজাতের অ্যাডাপটিবিলিটি পরীক্ষা, নন মালবেরি সেরিকালচারের ফিসিবিলিটি টেস্ট, তুঁত ও পলু পোকার জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় দারিদ্র্য দূর করাসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রেশম চাষ সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিনামূল্যে রেশম চারা তুলে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিদের হাতে। দু'বছরের মধ্যেই এ থেকে সুফল পাওয়া যাবে।
এদিকে রেশম গবেষণা কেন্দ্রকে ফের বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের আওতায় নিতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ খবর পাওয়ার পর কয়েকশ' রেশম চাষি ও শ্রমিকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমকালকে জানান, রেশম বোর্ডের আওতায় থাকার সময় ছয় মাসেও বেতন পাওয়া যেত না। কিন্তু বোর্ড থেকে আলাদা হওয়ার পর আমরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছি। আবার যদি এটি একীভূত করা হয় তাহলে আমাদের ফের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
আবার কয়েকজন রেশম চাষি জানান, রেশম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি একীভূত হলে আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
একীভূত করা হলে গবেষণাকাজে ব্যাঘাতের শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন চন্দ্রঘোনা রেশম গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প  পরিচালক কামনাশীষ দাসও ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন