সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পাহাড়ে তামাকের বদলে তুঁত চাষের আহ্বান


Prothom Alo

ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি ২০১২, ২০ পৌষ ১৪১৮, ৮ সফর ১৪৩৩


পাহাড়ে তামাকের বদলে তুঁত চাষের আহ্বান


পাহাড়ে এখন থেকে ক্ষতিকর তামাক চাষ বর্জন করে পরিবেশবান্ধব তুঁত চাষ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরফান শরীফ। তিনি বলেন, তামাক চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে যে মুনাফা পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা আসবে তুঁত চাষ থেকে। তুঁত থেকে বছরে চারবার ফলন পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর কোনো ফসল থেকে এভাবে ফলন পাওয়ার সুযোগ নেই। পাহাড়ের জনগণকে তুঁত চাষে আগ্রহী করে তুলতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন বছর মেয়াদি এক প্রকল্পের জন্য তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণাকেন্দ্রকে বরাদ্দ দেয়। ইতিমধ্যে প্রকল্পের অর্ধেক টাকা ছাড়ও দেওয়া হয়।
জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরফান শরীফ ১৪ মে কাপ্তাইয়ে অবস্থিত চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণাকেন্দ্র আয়োজিত তুঁত চাষ ও পলু (রেশম পোকা) পালনবিষয়ক মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আঞ্চলিক রেশম গবেষণাকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাসের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন, উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজালাল ও মর্যাস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মর্তুজা। মো. এরফান শরীফ বলেন, তুঁত চাষ ধান চাষের চেয়েও বেশি লাভজনক। ধান চাষ করলে বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। আর তুঁত থেকে ফলন আসে চারবার। তামাক, ধান ইত্যাদি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জমি লাগে। কিন্তু তুঁত যেকোনো পরিমাণ জমিতে, বাড়ির আশপাশে, পাহাড়ের ঢালে, বসতবাড়ির আঙিনাসহ যেকোনো স্থানে চাষ করা যায়। আর এতে যেকোনো বয়সের মানুষ তুঁত চাষে সহায়তা করতে পারেন। কাজেই তুঁত চাষ সব দিক থেকেই লাভজনক।
চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণাকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাস জানান, তুঁত হলো একরকম গাছ, যার পাতা রেশম পোকার প্রধান খাদ্য। রেশম পোকা তুঁতের পাতা খায়। ওই পোকা থেকেই তৈরি হয় উর্যাকৃষ্ট রেশম সুতা, যা অধিক মূল্যবান। কামনাশীষ দাস জানান, পাহাড়ের জনগণ আস্তে আস্তে রেশম চাষের প্রতি ঝুঁকছে। আর জনগণকে তুঁত চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণাকেন্দ্রের পক্ষ থেকে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থী লোকজন নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনগণকে তুঁত চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার তুঁতের চারা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। আরও বিপুল পরিমাণ চারা বিতরণের জন্য মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাজেরা খাতুন জানান, তুঁত চাষের পাশাপাশি মাশরুম চাষ করেও বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাহাড়ের মানুষকে এ ধরনের চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে মানুষ আর জুমচাষের প্রতি আগ্রহী হবে না। এ প্রসঙ্গে চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণাকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাস জানান, তাঁদের মাশরুম চাষ বিষয়েও পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন