শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রেশমের সুদিন ফিরে এলেও ফিরতে পারছে না রেশম চাষীরা


ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে মো. সালাউদ্দিন
রেশমের সুদিন ফিরে এলেও দেশের শতকরা ৭৫ ভাগ কাঁচা রেশম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে রেশমের রাজধানী ও রেশমের প্রাচীন বন্দর নগরী নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী ভোলাহাট উপজেলার রেশম চাষীরা রেশম চাষে আগ্রহী হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে রেশম চাষে ফিরে আসতে পারছে না।
৯০ এর দশকে সরকারের আত্মঘাতী ভ্রান্তনীতির কারণে তথা উদার বাজার অর্থনীতির ধাক্কায় এ অঞ্চলের রেশম চাষ মূখ থুবরে পড়ে । বিদেশি রেশম সূতা শুল্কমুক্তভাবে দেশের বাজারে প্রবেশ করায় পুরো রেশমের বাজার চলে যায় বিদেশি রেশম সুতার হাতে। আর দেশি রেশম সুতার গুণ, মান ও কম মূল্যের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মূল বলয় হতে ছিটকে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। রেশম চাষীরা বাধ্য হয়ে বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের পেশা রেশম চাষ ছেড়ে অনাহার,অর্ধাহার ও ঋণগ্রস্ত হয়ে চলে যায় অন্য পেশায়। ফলে মূল্যবান তুঁত জমিগুলি পরিণত হয় আম বাগান ও সবজির জমিতে। সে সময় রেশমগুটির মূল্য সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে সর্ব নিম্ন দর মণ প্রতি মাত্র দেড় হাজার টাকায় নেমে আসে। ফলে দেশীয় রেশম শিল্পের ঘটে সর্বনাশ। আজ প্রায় ২০ বছর ব্যবধানে সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত রেশম শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিদেশি রেশম সূতায় পর্যাপ্ত করারোপ করায় দেশি রেশম সূতার যেমন মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সে সাথে কদরও। বর্তমানে প্রতি মণ রেশম গুটি ৯-সাড়ে ১০ হাজার টাকা মণ দরে ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। তা দেখে আদি রেশম চাষীরা আবারো আগ্রহী হয়ে উঠেছে রেশম চাষে। ঘর মুখো হয়ে আবারো ফিরতে চায় রেশম চাষে।
একেতো মূল্য বৃদ্ধি তার ওপর ইতোপূর্বে ১শ ডিম বীজ পালন করে যেখানে ২৫-৩০ কেজি গুটি হতো, সেই স্থানে রিসার্চ এ্যাকশন প্লান উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও  আধুনিক পলু পালনে প্রশিণ দিয়ে  বর্তমানে  ১’শ ডিম বীজে উৎপাদন করছে ৭৫ হতে ৮০ কেজি। এর মূল্য প্রায় ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে বর্তমানে রেশম বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ১ বিঘে জমিতে ৩’শ ডিম বীজ পালন করে ১টি মৌসুমে সহজেই ১৮০-২৪০ কেজি কাঁচা রেশম বা রেশম গুটি উৎপাদন করা সম্ভব। সে হিসেবে বছরে ৪টি রেশম মওসুমে ১ বিঘে জমি হতে ৭২০ হতে ৯৬০ কেজি রেশমগুটি উৎপাদন সম্ভব। এর মূল্য প্রচলিত বাজারে দাড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা অন্য কোন ফসলে ১ বিঘে জমি হতে বছরে এত টাকা আয় করা সম্ভব নয়।
এদিক ল্য রেখে ভোলাহাটের সুনিপুণ আদী ও অকৃত্রিম হাজারো রেশম চাষী আবারো রেশম চাষে আগ্রহী। কিন্তু তুঁত চাষ উপযোগী জমি পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু তুঁত জমিগুলি আম বাগানে পরিণত হয়েছে, তা বিনষ্ট করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে রেশম চাষীরা পড়েছে উভয় সংকটে। রেশম চাষীদের দাবি ১৯৪৭ এর পরে মহানন্দা নদীর সর্বনাশা ভাঙনে প্রায় ২’শ ৬২ একর মূল্যবান তুঁত জমি পর্যায়ক্রমে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। ভেঙেছে এপার আর গড়েছে ওপার। তাই ভারত সীমানা জুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এটি বর্তমানে উঁচু জমিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৬৫ বছর উক্ত চরের জমি ভারত পর্যায়ক্রমে কুীগত ও ভোগ দখল করে আসছিল। ২০০৮ সালে আপোসে উভয় দেশের জরীপ ও সীমান্ত রীদের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণের পর ২০১১ সালে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ঐ চরের অধিকার ফিরে পেয়েছে। ভোলাহাটের আম জনতা, হাজারো আদি রেশম চাষী ও বোর্ড কর্তৃপ উক্ত নদী শিকস্তি চরের জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকৃত আদি প্রান্তিক রেশম চাষীদের খণ্ডকালীন মেয়াদি লীজের মাধ্যমে প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসক এবং রেশম বোর্ড বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছে। রেশম চাষীদের অভিমত উক্ত বিষয় বাস্তবায়ন করলে আবারো রেশমের সুদিন ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে রেশম বোর্ড চেয়ারম্যান সুনীল চন্দ্র পালও একমত এবং রেশম চাষ সম্প্রসারণের জন্য তিনি জেলা প্রশাসক বরাবরে রেশম চাষীদের লিখিত আবেদনটি পাঠিয়েছেন বলে জানান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক কে.এম. আলী আজম বলেন, যেহেতু ভোলাহাট উপজেলা রেশম শিল্পের কেন্দ্রভূমি। সেহেতু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দলের মতামত  ও জরিপ রিপোর্ট প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন