
১৯৭৮ সালের প্রথমদিকে কুষ্টিয়াতে তুঁত চাষ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পতিত জমিতে তুঁত চাষের প্রসার ঘটে। পতিত ও উঁচু জমি তুঁত গাছ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে যে কোন জমিতেই তুঁত চাষ করা যায়। পলু পোকা রেশম গুটি তৈরি করে এবং ওই গুটি থেকে তৈরি হয় রেশম সুতা। পলু পোকার একমাত্র খাদ্য তুঁত গাছের পাতা।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও পাবনার ঈশ্বরদীর বীজাগার থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে পোকা জন্ম লাভ করে। বীজাগার থেকে ডিম নিয়ে আসার পর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখার ১০ দিন পর পলু পোকার জন্ম হয়। জন্মলাভের পর পলু পোকা বাঁশের চাটাইয়ের তৈরি ডালার উপর পরিচর্যা ও লালন-পালন করা হয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার ২২ থেকে ২৬ দিনের মধ্যে পলু পোকা রেশম গুটি তৈরি শুরু করে।
তুঁত গাছের পাতা খেয়ে পলু পোকা জীবনধারণ করে এবং পোকার মুখ দিয়ে নিঃসৃত লালা থেকে রেশম গুটি তৈরি হয়। পলু পোকা লালা বের করার সময় মুখ এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করে। একটি রেশম গুটি তৈরিতে পলু পোকাকে ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ বার মুখ নাড়াচাড়া করতে হয় হয়। পলুর মুখের লালা থেকে উত্পাদিত রেশম গুটিই হচ্ছে রেশম শিল্পের কাঁচামাল।
গুটি পরিপূর্ণ হওয়ার পর সেগুলো রেশম সুতা তৈরির উপযোগী হয়। পরবর্তীতে সুতা তৈরির উপযোগী রেশম গুটিগুলো সংগ্রহ করে ৯৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানিতে ফুটিয়ে সুতা কাটার মেশিনের সাহায্যে রেশম সুতা আহরণ করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতাকে প্রসেস করে বয়ন করা হয় রেশম শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন বস্ত্র। জাতভেদে একটি রেশম গুটি থেকে ৩শ’ ৫০ থেকে ১ হাজার ৮শ’ মিটার পর্যন্ত সুতা থাকে।
রেশম চাষ করে পরিবারের গৃহিণীসহ রেশম চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। রেশম চাষে বছরে ৪/৫ বার রেশম গুটি উত্পাদন হয়। শ্রমঘন গ্রামীণ এই কুটির শিল্পের সাথে পরিবারের বেকার যুবকসহ মহিলারাও সম্পৃক্ত হয়ে উপার্জনক্ষম হচ্ছেন। একটি তুঁত গাছ ৩৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
কুষ্টিয়া রেশম বোর্ডের সহকারী পরিচালক জানান, সঠিক পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনার মাধ্যমে এই অঞ্চলে রেশম চাষ সম্প্রসারণ এবং চাষিদের কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্প উপকরণের মধ্যে ডালা, চন্দ্রকী সরবরাহ ও উত্পাদিত রেশম গুটি বাজারজাতকরণে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন