রাজশাহী অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল তুঁতফল
রাজশাহী অঞ্চলে তুঁতফল খুব জনপ্রিয় ছিল। এক সময় গ্রামাঞ্চলের গরীব, ভূমিহীন, অসহায় নারী-পুরুষ বাড়ির অঙিনায়, পতিত জমিতে ও রাস্তার পাশে তুঁতগাছ লাগাতো। হাজার হাজার কৃষক, বসনী তুঁতচাষ ও রেশম চাষের সাথে জড়িত ছিল। তখন শিশু , কিশোর ও বাচ্চারা তুঁতফল পছন্দ করতো বেশী। টকটকে লাল, কালো, হলুদ সব রঙের তুঁতফল তুঁতগাছ থেকে পেড়ে খেত। তুতঁফল গাছে থোকায় থোকায় আঙ্গুরের মতো গাছে ধরে থাকে। তুঁতফল দেখতে অনেকটা আঙ্গুর গুচ্ছের মতো। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলে রয়েছে প্রায় সব ধরনের পুষ্টিগুণ। র্অধ শতাধিক জাতের তুঁত গাছের মধ্যে ৭/৮ জাতের তুঁত গাছের ফল খুব ভাল হয় বলে জানা গেছে। এখন বাংলাদেশ রেশম র্বোডের অধীনে ৫টি রিজিয়ন, ১০টি জোন, ৪০টি কেন্দ্রে ও ১৬৪ টি উপকেন্দ্রে তুঁতচাষ হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, সপুরা সিল্ক মিলস্ লিমিটেড ও ব্র্যাক বিভিন্ন জাতের তুতঁগাছের চাষ করছে। তবে এখানে খুব কম তুতঁফল উপাদন হয় ।
তুতঁফলের আদিবাস চীনে। এর পর ভারত, বাংলাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স’ানে মালবেরি বা তুতঁফলের চাষ হয়ে থাকে। তুঁতফলের ইংরেজি নাম মালবেরি। আর বৈজ্ঞানিক নাম মোরাস ইন্ডিকা। এটি মোরসিই পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। এই পরিবারের ১৩৬ টি জাত রয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ রেশম বের্াডের সাবেক পরিচালক ড.এ কে এম রফিউল ইসলাম বলেছেন, এখনও বাংলাদেশ রেশম র্বোডের অধীনে ৫টি রিজিয়ন, ১০টি জোন, ৪০ টি কেন্দ্রে ও ১৬৪ টি উপকেন্দ্রে তুঁতচাষ হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, সপুরা সিল্ক মিলস্ লিমিটেড ও ব্র্যাকসহ বেশ কিছু এনজিও বিভিন্ন জাতের তুতঁগাছের চাষ করছে। তুঁতফলে সব ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী রয়েছে ক্যালশিয়াম ও ক্যারোটিন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুতঁফল খেয়েছেন। তুঁতফলের জুস, জ্যাম, জেলি খেয়েছেন এর মধ্যে বাংলাদেশের তুতঁফল বেশী সুস্বাদু।
সপুরা সিল্ক মিলস্ লিমিটেডের ব্যাবস’াপনা পরিচালক আলহাজ্ব সদর আলী বলেছেন, এক সময় গ্রামাঞ্চলের গরীব, ভূমিহীন, অসহায় নারী-পুরুষ বাড়ির অঙিনায় , পতিত জমিতে ও রাস্তার ধারে তুঁতগাছ লাগাতো। তখন হাজার হাজার কৃষক, বসনী তুঁতচাষ করতো। এসময় শিশু, কিশোর ও বাচ্চারা তুঁতফল খেত। এত করে গ্রামীণ জনগণের পারিবারিক পুষ্টির অনেকটা পূরণ হতো। পাশাপাশি তুতঁচাষী কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস’া ভাল ছিল। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেশম চাষ ও উৎপাদনের সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে চীন, ভারতসহ রেশম উৎপাদনকারী দেশগুলোতে প্রচুর তুঁতচাষ হয়। তিনিও অনেক দেশের তুতঁফল খেয়েছেন, কিন’ বাংলাদের তুতঁফল খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইউনুছ আলী বলেছেন, বাংলাদেশে স’ানীয় জাতের তুঁতফলের চাষ হয়। তুতঁফল সব জায়গাতেই কম বেশী হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর ও গাজীপুর এলাকায় বেশী জন্মে। এ সব এলাকায় এখনও প্রচুর পরিমাণে তুঁতগাছ রয়েছে। তুঁতফল বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের কাছে আবারো জনপ্রিয় ফল হতে পারে। (সূএ: সোনালী সংবাদ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন