কামনাশীষ দাস, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটউট, রাজশাহী
রেশম গুটির চাষের সাথে আমাদের দেশের মানুষ অনেক কাল ধরেই পরিচিত। অল্প পরিমাণ জমিতে তুঁত চাষ করে পলুপালনের মাধ্যমে রেশম গুটি উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশের যেসব উঁচু স্থানে তুঁত গাছ জন্মানো যায় সেসব স্থানে রেশমকীট জন্মানো যাবে। এদেশের প্রায় যে কোন আবহাওয়া ও তাপমাত্রায় রেশমকীট পালন করা যায়। তবে ২১০-২৯০ তাপমাত্রা এবং ৯০% বায়ুর আর্দ্রতা রেশম চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আবহাওয়া ও উর্বর মাটির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি রেশম চাষ হয়। এছাড়া নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর ও সিলেটে রেশম পোকার চাষ করা হয়। রেশম চাষের জন্য দুইটি কারিগরি দিক অনুসরণ করতে হবে। এগুলো হলো : ১.তুঁত গাছের চাষ ২. রেশম পোকা পালন।
![]() ![]() | |
ছবি: বিভিন্ন জাতের রেশম গুটি, ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
- রেশম চাষে বছরে কমপক্ষে ৪বার ফসল পাওয়া যাবে।
- অন্যান্য ফসলের জমিতে তুঁতের চাষ না করেও বাড়ীর আশে-পাশে উঁচু জমির আইলে ও পুকুর পাড়ে তুঁতের গাছ লাগিয়ে পরিবারের বাড়তি আয়ের সংস্থান করা সম্ভব।
- অল্প টাকা বিনিয়োগ করে গ্রামীণ এলাকায় গুটি থেকে সুতা, রিলিং, কাপড় বোনা ইত্যাদি ধরণের কুটির শিল্প গড়ে তোলা যাবে।
- এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
রেশম সুতা থেকে প্রস্ত্তত করা আরামদায়ক ও অভিজাত বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া রেশম থেকে উন্নত ধরণের মাছ ধরার ও অস্ত্রপচারে ব্যবহৃত সুতা প্রস্তুত হয়। রেশম পোকার শুককীটের তেল মাছ ও হাঁস-মুরগীর খাবার হিসেবে, সাবান তৈরিতে এবং জমির সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই রেশম চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব। রেশম বস্ত্র বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে।
তুঁত গাছের চাষ
রেশম চাষ করতে হলে তুঁত গাছের চাষ করতে হবে কারণ রেশম পোকা তুঁত গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। সাদা তুঁত, কালো তুঁত এবং লাল তুঁত-এ তিন প্রজাতির গাছে রেশম পোকা চাষ করা যায়। তবে সাদা তুঁত গাছই রেশম পোকার সবচেয়ে পছন্দের। তুঁত গাছ একবার লাগালে ২০-২৫ বছর ধরে পাতা দেয়। বিভিন্ন উচ্চতায় কেটে তুঁত গাছকে ‘ঝুপি’, ‘ঝাড়’ ও ‘গাছতুঁত’ হিসেবে চাষ করা যায়। তুঁত চাষের নিয়ম:
| ![]() |
ছবি: তুঁত চাষ
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
- জমি ৩ থেকে ৪ বার চাষ দিয়ে মাটিকে গুঁড়া করে নিতে হবে।
- জমি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তুঁত কাঠি ১২-১৫ সে.মি. (৫-৬ ইঞ্চি) পরিমাণ মাটির গভীরে অনায়াসে ঢুকানো যায়।
- তুঁত কাঠি লাগানোর আগে বিঘা প্রতি ৪০ মণ জৈব সার প্রাথমিকভাবে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- ৮-৯ মাসের পাকা ১২-১৩ মিলিমিটার ব্যাসের ও ১৫-২০ সে.মি. (তিন কুঁড়ি বিশিষ্ট) দৈর্ঘ্যের ডাল চাষ করা জমিতে আড়াআড়িভাবে লাগাতে হবে।
- পূর্ব-পশ্চিমে লাইন করে সারিবদ্ধভাবে তুঁতের ডাল লাগাতে হবে।
- প্রতিটি সারিতে ২ লাইন করে ডাল পুঁততে হবে।
- একটি লাইন থেকে অপর লাইনের দূরত্ব হবে ৪৫-৬৭ সে.মি. (১-১.৫ ইঞ্চি)।
- ডাল লাগানোর ৬-৭ মাসের মধ্যেই নতুন গাছগুলি প্রথম পাতা তোলার জন্য উপযুক্ত হবে।
- এ পদ্ধতিতে লাগানো তুঁতকে ঝুপি তুঁত বলে।
- ঠিকমত যত্ন করলে প্রতি বিঘা ঝুপি তুঁত থেকে ৩.৭-৪.৪৪ টন বা ১০০-১২০ মণ পাতা পাওয়া যাবে।
- ১ বছর বয়স্ক তুঁত চারা রোপণ করলে তা থেকে ৫৬-৭৫ কেজি বা ১.৫ বা ২ মণ পাতা পাওয়া যাবে।
- প্রতি বিঘা ঝুপি তুঁতের পাতা দিয়ে বছরে ১৪৯-১৮৬ কেজি বা ৪-৫ মণ রেশম গুটি উৎপন্ন করা যাবে।
চাষ উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
জলবায়ু
|
মাটির প্রকৃতি
|
বাংলাদেশের আবহাওয়ানুযায়ী আশ্বিন-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাস তুঁত লাগানোর উপযুক্ত সময়।
|
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে তুঁত গাছ খুব ভালো জন্মে। এছাড়া উঁচু ও সমতল জমি তুঁত চাষের জন্য ভালো।
|
সেচ ও নিষ্কাশন
বর্ষাকালে উপযুক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। খরার দিনে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। শীতকালে ১২-১৫ দিন ছাড়া ছাড়া এবং গরমের দিনে ৭-১০ দিন ছাড়া ছাড়া জমিতে সেচ দিতে হবে। প্রতিবারে ৮-১০ সে.মি. গভীরভাবে মাটি ভিজিয়ে সেচ দিতে হবে।
রেশম পোকা/পলু পালন
| ![]() |
ছবি: পলু পালন
ছবি তোলার স্থান :রাজশাহী।
|
পলু পালনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
- ঘর শোধনের জন্য স্প্রে যন্ত্র
- গুটি করার জন্য বাঁশের তৈরি চন্দ্রকী
- ডালা রাখার জন্য বাঁশের তৈরি ঘড়া কাঠি
- তুঁত পাতা কাটার জন্য ছুরি এবং পিড়ি
- পলু পোষার জন্য বাঁশের তৈরি ডালা
- ছোট পোকা ঝাড়ার জন্য মোরগের পালক
- পলু সরানোর জাল
- তাপমাত্রা ও বাতাসের জলীয় বাষ্প মাপার জন্য ড্রাইওয়েট বালু থার্মোমিটার
- পলু তোলা ও রাখার জন্য পলিথিন, থলি ও চটপাতা
- শীতের সময় ঘর গরম করার জন্য চুলা বা হিটার
- পলুর বেডে আর্দ্রতা রক্ষার জন্য স্পঞ্জ প্যাড
- বালতি, গামলা (পানি, ফরমালিন গোলা পানি, কাটাপাতা রাখার জন্য)
- ছোট পলু ঢাকার জন্য পাতলা পলিথিনের চাদর বা মোম দেয়া কাগজ
- ফরমালিন, চুন, পোড়াতুষ ও আলকাতরা
ডিম সংগ্রহ
- বাংলাদেশসেরিকালচার বোর্ডের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস থেকে ভালোভাবে পরীক্ষিত ও রোগমুক্ত ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
- এর চেয়ে ভালো ফল পেতে ডিম না নিয়ে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় অবস্থায় চাকা বাধা পোকা সংগ্রহ করে পালন করতে হবে। এতে গুটি করতে মাত্র ১২-১৫ দিন সময় লাগবে।
ডিম ফোটানো
- ডিমগুলিকে ডালাতে হালকা করে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং উপরে অন্য একটি ডালা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- আবহাওয়া খুব শুকনা থাকলে আর্দ্রতা রক্ষার জন্য ভিতরে আধভেজা স্পঞ্জ রেখে দিতে হবে।
- ডিম ফোটাবার জন্য ঘরের তাপমাত্রা ২৫০ সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ৭৫-৮০% থাকতে হবে।
- এ অবস্থায় রেখে দিলে ৮-৯ দিনের মাথায় ডিমে কালো ছিট পড়বে এবং ৯-১০ দিনের মাথায় ডিমের সারা গা কালো বা কালচে ধূসর হবে।
- এ অবস্থায় ডিম ২% ফরমালিন দ্রবণে ৫মিনিট ডুবিয়ে রেখে পরে পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে বিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
- ডিম কালচে ধূসর বর্ণ ধারণের সাথে সাথে ডিম অন্ধকারে রাখার জন্য ডালার উপর কাল কাগজ অথবা কাল কাপড় দিয়ে ঢেকে বাক্স তৈরি করতে হবে।
- ডিম ধূসর বর্ণ ধারণের একদিন পরে অর্থাৎ ১০-১১ দিনের মাথায় ডিম ফুটে পলু বের হবে।
- ডিম ফোটাবার দিনে সকাল ৮-৯ টার মধ্যে অন্ধকার থেকে আলোয় বের করতে হবে।
- পরের দিন সকালে আর একবার একইভাবে ডিম থেকে পলু সংগ্রহ করতে হবে।
- তৃতীয় দিনে ডিম থেকে ফোটা পোকা পলু পালনের জন্য নেয়া যাবে না।
- ডিম ফুটে বের হলে তার উপর কচিপাতা (গাছের ডগার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাতা) ছোট করে কেটে ছড়িয়ে দিতে হবে।
![]() | ![]() | ![]() | ![]() |
ছবি: পলুর ডিম
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
ছবি: সদ্য ফুটানো পলু
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
ছবি: ব্রাশিং
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
ছবি: পলুর উপর পাতা ছিটানো
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী। |
- পাতাগুলোকে ছুরি দিয়ে চৌকা করে ০.৫-২.০ সে.মি. মাপে কাটতে হবে।
- এ অবস্থায় ঘণ্টাখানেক পাতাসহ রেখে টোকা দিয়ে বা একটি পালক দিয়ে আস্তে আস্তে পোকাগুলোকে ঝেড়ে বা ব্রাশিং করে দিয়ে চাকী বাধতে হবে।
- চাকিটি একটি সাদা কাগজের উপর বাধতে হবে। যার চারপাশে ভেজা স্পঞ্জ দিতে হবে।
- পোকা ব্রাশিং করার পরদিন বেড পরিষ্কার করা যাবে না।
- তার পরদিন সকালে পোকাগুলির উপর একটি জাল বিছিয়ে দিয়ে তার উপর পাতা দিতে হবে।
- ঘণ্টাখানেক পরে পাতা খেতে খেতে পোকাগুলো যখন জালের ভিতর দিয়ে উপরে উঠে আসবে তখন আস্তে করে জাল ও নতুন পাতাসহ পোকাগুলি উঠিয়ে অন্য ডালায় দিতে হবে।
- এভাবে পুরনো পাতা ও পলুর মল পরিষ্কার করাকে স্থানীয় ভাষায় কাসার বলে।
- ব্রাশিং করার পর থেকে পোকাকে দিনে চারবার খেতে দিতে হবে। খাবার দেয়ার ভালো সময় হলো সকাল ৪টা, বেলা ১০টা, বিকেল ৪টা ও রাত ১০টা।
- ডিম থেকে পলু পোকা বেরিয়ে আসার পর ২০-২৫ দিন তুঁত পাতা খাবে।
- পলু অবস্থায় চারবার খোলস বদলাবে। চারবার খোলস বদলানোর পর পলু পোকা ৫ম বা রোজের পলু অবস্থায় থাকবে। পঞ্চম অবস্থায় পলু পালনের জন্য বিভিন্ন ধরণের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার প্রয়োজন হবে।
খোলস বদলানো
| ![]() |
ছবি: পলুর রহা অবস্থা
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
খোলস ছাড়ার আগে ও পরে পলুর যত্ন
- রহাতে বসার আগে শেষ খাবারের পাতা তুলনামূলকভাবে একটু ছোট করে কেটে দিতে হবে।
- পোকা রহাতে বসার লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে কাসার বা বেড পরিষ্কার করতে হবে।
- রহার লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে পলুর বেড শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দরজা জানালা খুলে সরাসরি বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
- রহা অবস্থায় পলু নাড়াচাড়া বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া ঠিক হবে না।
- বেডের সব পোকা রহায় বসে যাবার পর যখন দু’একটি পোকা খোলস ছাড়তে শুরু করবে তখন ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভেজানো ও পরে শুকনো গুড়াচুন একটি কাপড়ে করে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
রেশম গুটি করা ও ছড়ানোর পদ্ধতি
- গুটি করার সময় হলে পলু পোকার শরীর স্বচ্ছ হয়ে যাবে, পায়খানা নরম ও সবুজ হবে, এবং মাথা ছোট ও সরু হয়ে যাবে।
- এ অবস্থায় পলুকে ডালা থেকে তুলে গুটি করার জন্য চন্দ্রকীতে দিতে হবে।
- গুটি করার সময় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা যথাক্রমে ২৩০-২৪০ সেলসিয়াস ও ৭০% থাকতে হবে।
- যে ঘরে পোকা পালন করা হয় সে ঘরে গুটি করা যাবে না।
- পলু ঘরের বারান্দা গুটি করার জন্য ব্যবহার করা যাবে।
- ঘরের পোকা সম্পূর্ণ চন্দ্রকীতে উঠে গেলে পলু ঘরে চন্দ্রকী রাখা যাবে।
![]() | ![]() |
ছবি: চন্দ্রকীতে রেশম গুটি
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
ছবি: চন্দ্রকী থেকে রেশম গুটি ঝোড়াই
ছবি তোলার স্থান : রাজশাহী।
|
- একটি ৬˝´৪˝ ডালার পোকার জন্য দুটি ৬˝´৪˝আকারের চন্দ্রকী ব্যবহার করতে হবে।
- পোকা চন্দ্রকীতে দেয়ার তিনদিন পর পুত্তলীতে পরিণত হবে।
- এই সময় গুটির মধ্যে পুত্তলীর চামড়া নরম থাকে। তাই তিনদিন চন্দ্রকী থেকে গুটি ছড়ানো যাবে না।
- গরমের সময় চন্দ্রকীতে পোকা দেয়ার ৫ম দিন এবং শীতের সময় ৫দিন পরে চন্দ্রকী থেকে তুলতে হবে।
- রোদে গুটি শুকানো ঠিক হবে না।
পলুর রোগ ও তার প্রতিকার
- পলু পোকার সাধারণত ৫টি রোগ আমাদের দেশে দেখা যায়। যথা :
- প্রেব্রিন বা কটারোগ
- ফ্লাসারী বা কালশিরা রোগ
- গ্রাসারী বা রসা রোগ
- গ্যাটিন বা স্বল্পা রোগ
- মাসকারডিন বা চুনাকাঠি রোগ
- কটা রোগের ক্ষেত্রে পলুঘর ও পলু সরঞ্জাম ২ থেকে ৪ শতাংশ ফরমালিন দিয়ে খুব ভালো করে বিশুদ্ধ করতে হবে।
- কালশিরা রোগে আক্রান্ত পোকায় ২% ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানি প্রতি মণ পাতায় তিন লিটার হিসেবে খাওয়াতে হবে।
- রসা রোগ দমনের জন্য পলু ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা যতদূর সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- স্বল্পা রোগ এড়াতে পোকাকে ভালো পাতা সরবরাহ করতে হবে।
- চুনাকাঠি রোগ এড়ানোর জন্য পুল পালনের আগে ডিম ২% ফরমালিনে ধুয়ে নিতে হবে এবং পুলঘরে প্রয়োজনীয় তাপ ও আর্দ্রতার ব্যবস্থা করতে হবে।
মূলধন
রেশম চাষ শুরু করার জন্য ২৫০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়-স্বজন, সরকারী ও বেসরকারী ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা)- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
- ১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ফসল উৎপাদন খরচ
খরচের খাত
|
পরিমাণ
|
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
|
জমি তৈরি
|
৩ /৪ বার চাষে
|
১০০০
|
পানি সেচ
|
আনুমানিক ২ বার
|
৫০০
|
শ্রমিক
|
৬ জন (প্রতিজন= ১৫০ টাকা)
|
৯০০
|
সার
|
প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার
|
নিজস্ব
|
বিকল্প হিসেবে
টিএসপি=১৮.৫ কেজি (১ কেজি=৩০ টাকা)=৫৫৫
ইউরিয়া=১২৮ কেজি (১ কেজি=৩৫ টাকা)=৪৪৮০
পটাশ=১৪ কেজি (১ কেজি=৩০ টাকা)=৪২০
|
৫৪৫৫
| |
তুঁতকাঠি
|
১০ কুইন্টাল (১ কুইন্টাল= ৫০ টাকা)
|
৫০০
|
পলু পালনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম : পলু পালনের ডালা
|
২৪টি
(১টি ডালা= ১৫ টাকা)
|
৩৬০
|
চন্দ্রকী
|
১৬টি= টাকা (১টি চন্দ্রকী= ১৯ টাকা)
|
১৪৪
|
বাঁট, জাল, ঝুড়ি, হিটার, থার্মোমিটার, প্রভৃতির মোট মূল্য
|
প্রয়োজন অনুযায়ী
|
২৫০০
|
পলু পালনের ঘর তৈরি ৬মি.´৩মি.
(মাটির)
|
১টি
|
৬০০
|
পলু পালনের খরচ :
৩ বারে ডিমের দাম
|
১০০টি ডিম
|
৭০০
|
৩ বারে শ্রমিক খরচ
|
৩০ জন (১জন= ১৫০ টাকা)
|
৪৫০০
|
জমি ভাড়া
|
একবছর
|
৪০০০
|
মোট খরচ
|
২১১৫৯
| |
মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।
|
রেশম চাষ করার আগে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে রেশম চাষের পদ্ধতি জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
রেশম বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের আবহাওয়া রেশম চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ভালো মানের রেশম গুটি উৎপাদন করে তা বেশি দামে বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। এছাড়া বিদেশে রেশম সুতা থেকে প্রস্তুত করা বস্ত্রের বেশ চাহিদা রয়েছে। রেশম চাষ করে তাই দেশের আর্থিক উন্নতি করা সম্ভব।
প্রশ্ন ১ : রেশমকীট জন্মানোর জন্য কেমন স্থান দরকার ?
উত্তর : উঁচু স্থান যেখানে তুঁত গাছ জন্মানো যায় সেসব স্থান দরকার।
প্রশ্ন ২ : রেশম চাষের জন্য কি ধরণের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা প্রয়োজন ?
উত্তর : ২১০-২৯০ তাপমাত্রা এবং ৯০% বায়ুর আর্দ্রতা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৩ : রেশম চাষের কারিগরি দিক কয়টি ও কিকি ?
উত্তর : দুইটি। যথা : ১. তুঁত গাছের চাষ ও ২. রেশম পোকা পালন
প্রশ্ন ৪ : তুঁত গাছ লাগানোর উপুযুক্ত সময় কোনটি ?
উত্তর : আশ্বিন-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাস।
প্রশ্ন ৫ : রেশম চাষ করে কি ভালো আয় করা সম্ভব ?
উত্তর : হ্যাঁ, কারণ রেশম সুতা বিভিন্ন কাজে লাগে। এছাড়া রেশম বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন