ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে :
নানামুখী সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রেশম সুতা চাষ। বিদেশী সুতার দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ঐতিহ্যের ধারক রেশম সুতা উৎপাদন এখন চরম সংকটের মুখে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যাপক লোকসানের শিকার হচ্ছেন চাষীরা। অনেকেই পৈতৃক পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেশম চাষের ইতিহাস বহু পুরানো। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খাঁর আমলে বর্গি দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে অবিভক্ত ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে কিছু তাঁতী পালিয়ে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে বসতি গড়ে তুলেন। জীবিকার তাগিদে তারাই এ অঞ্চলে প্রথম স্বল্প পরিসরে রেশম চাষ শুরু করেন। মুসলিম আমলে গৌড়ের রাজ পরিবারের রাজ পোশাক ও সৌখিন বস্ত্র হিসাবে রেশমের প্রচুর চাহিদা ছিল। ফলে গৌড় নগরীর আশপাশে ব্যাপকভাবে রেশম চাষ শুরু হয়। এ সময় চাষীরা রেশম চাষ করে প্রচুর আয় করত। একপর্যায়ে রেশমের সুতিকাগার বা প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি পায় একসময়ের বাংলার রাজধানী গৌড়ের উপকণ্ঠে অবস্থিত ভোলাহাট। দেশ বিভাগের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাটে রেশম চাষ অব্যাহত থাকে । সেসময় দেশের ৯০ শতাংশ রেশম সুতা উৎপাদিত হতো ভোলাহাটে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যের ধারক এই শিল্পে ধস নামে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একসময় ভোলাহাটের সিংহভাগ মানুষই কোন না কোনভাবে রেশম পোকার (পলু পোকা) খাদ্য তুঁত পাতার গাছ, পলু পোকা পালন, রেশমগুটি উৎপাদন, কাট ঘাইয়ে (হস্তচালিত বিলিং মেশিন) রেশমসুতা
ৎপাদন ও সুতা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। লাভজনক হওয়ায় সে সময় তারা এ পেশাকেই বেছে নিতেন। অনেকে আবার আম বাগান কেটে তুঁত গাছ লাগাতেন। কিন্তু ১৯৯২ সালে চীন থেকে শুল্ক মুক্ত সুতা আমদানি শুরু হলে রেশম গুটি উৎপাদনে ধস নামে। আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে রেশম গুটি ও সুতার উৎপাদন। ভোলাহাটের রেশম বীজাগার সূত্রে জানা গেছে, আগে ভোলাহাটের তিন হাজার বিঘা জমিতে তুঁত গাছ ছিল। এখন তা কমে আড়াইশ'-তিনশ' বিঘায় এসে দাঁড়িয়েছে। একসময় এলাকার মানুষ আম বাগান কেটে তুঁত বাগান গড়ে তুলেছিল। কিন্তু অব্যাহত লোকসানের কারণে এখন তারা তঁতু বাগান কেটে আম বাগান গড়ে তুলেছে। ভোলাহাটের রেশম চাষী আব্দুর রহমান জানান, বহুকাল থেকে ভোলাহাটে উৎপাদিত রেশম সুতা দিয়েই এলাকার তাঁতকলগুলো চলত। এ এলাকায় উৎপাদিত রেশম সুতার কাপড়ের বেশ চাহিদাও ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে শুল্কমুক্তভাবে চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকে সুতা আমদানি শুরু হলে ভোলাহাটের রেশম চাষীদের কপাল পুড়ে। স্থানীয় তাঁতীরাও নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশী সুতা নির্ভর হয়ে পড়ছে। তিনি আরও জানান ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় এখানকার রেশমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে সরকারিভাবে এদের সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি। ফলে রেশম চাষীরা বাধ্য হয়েই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যারা এখনো টিকে আছেন তারা পড়েছেন নতুন সংকটে। ভোলাহাটে প্রচুর আম বাগান থাকায় প্রতিবছর আম মৌসুমে বাগানে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। আর এ কীটনাশকের কারণে রেশমের পলু পোকা মরে যাচ্ছে। এর ফলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষীরা। এখাতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে ভোলাহাটের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই রেশম শিল্পও একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নানামুখী সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রেশম সুতা চাষ। বিদেশী সুতার দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ঐতিহ্যের ধারক রেশম সুতা উৎপাদন এখন চরম সংকটের মুখে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যাপক লোকসানের শিকার হচ্ছেন চাষীরা। অনেকেই পৈতৃক পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেশম চাষের ইতিহাস বহু পুরানো। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খাঁর আমলে বর্গি দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে অবিভক্ত ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে কিছু তাঁতী পালিয়ে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে বসতি গড়ে তুলেন। জীবিকার তাগিদে তারাই এ অঞ্চলে প্রথম স্বল্প পরিসরে রেশম চাষ শুরু করেন। মুসলিম আমলে গৌড়ের রাজ পরিবারের রাজ পোশাক ও সৌখিন বস্ত্র হিসাবে রেশমের প্রচুর চাহিদা ছিল। ফলে গৌড় নগরীর আশপাশে ব্যাপকভাবে রেশম চাষ শুরু হয়। এ সময় চাষীরা রেশম চাষ করে প্রচুর আয় করত। একপর্যায়ে রেশমের সুতিকাগার বা প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি পায় একসময়ের বাংলার রাজধানী গৌড়ের উপকণ্ঠে অবস্থিত ভোলাহাট। দেশ বিভাগের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাটে রেশম চাষ অব্যাহত থাকে । সেসময় দেশের ৯০ শতাংশ রেশম সুতা উৎপাদিত হতো ভোলাহাটে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যের ধারক এই শিল্পে ধস নামে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একসময় ভোলাহাটের সিংহভাগ মানুষই কোন না কোনভাবে রেশম পোকার (পলু পোকা) খাদ্য তুঁত পাতার গাছ, পলু পোকা পালন, রেশমগুটি উৎপাদন, কাট ঘাইয়ে (হস্তচালিত বিলিং মেশিন) রেশমসুতা
ৎপাদন ও সুতা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। লাভজনক হওয়ায় সে সময় তারা এ পেশাকেই বেছে নিতেন। অনেকে আবার আম বাগান কেটে তুঁত গাছ লাগাতেন। কিন্তু ১৯৯২ সালে চীন থেকে শুল্ক মুক্ত সুতা আমদানি শুরু হলে রেশম গুটি উৎপাদনে ধস নামে। আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে রেশম গুটি ও সুতার উৎপাদন। ভোলাহাটের রেশম বীজাগার সূত্রে জানা গেছে, আগে ভোলাহাটের তিন হাজার বিঘা জমিতে তুঁত গাছ ছিল। এখন তা কমে আড়াইশ'-তিনশ' বিঘায় এসে দাঁড়িয়েছে। একসময় এলাকার মানুষ আম বাগান কেটে তুঁত বাগান গড়ে তুলেছিল। কিন্তু অব্যাহত লোকসানের কারণে এখন তারা তঁতু বাগান কেটে আম বাগান গড়ে তুলেছে। ভোলাহাটের রেশম চাষী আব্দুর রহমান জানান, বহুকাল থেকে ভোলাহাটে উৎপাদিত রেশম সুতা দিয়েই এলাকার তাঁতকলগুলো চলত। এ এলাকায় উৎপাদিত রেশম সুতার কাপড়ের বেশ চাহিদাও ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে শুল্কমুক্তভাবে চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকে সুতা আমদানি শুরু হলে ভোলাহাটের রেশম চাষীদের কপাল পুড়ে। স্থানীয় তাঁতীরাও নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশী সুতা নির্ভর হয়ে পড়ছে। তিনি আরও জানান ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় এখানকার রেশমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে সরকারিভাবে এদের সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি। ফলে রেশম চাষীরা বাধ্য হয়েই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যারা এখনো টিকে আছেন তারা পড়েছেন নতুন সংকটে। ভোলাহাটে প্রচুর আম বাগান থাকায় প্রতিবছর আম মৌসুমে বাগানে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। আর এ কীটনাশকের কারণে রেশমের পলু পোকা মরে যাচ্ছে। এর ফলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষীরা। এখাতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে ভোলাহাটের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই রেশম শিল্পও একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন