সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রেশম শিল্প : বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনার দিগন্ত


 সোমবার ১ ফাল্গুন ১৪১৮ | ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৩৩ হিজরি | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২
রেশম শিল্প : বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনার দিগন্ত
ড. আইনুল হক
রেশম চাষ এবং রেশম কি এ নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ অনেক। এ রেশম চাষ বাংলাদেশে হয় এবং এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে তা অনেকের কাছে অজানা। মোগল আমলে রাজশাহীতে রেশম চাষের শুরু। কাল পরিক্রমায় আজও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেশম চাষ হচ্ছে। আর এই রেশম চাষের পরিপ্রেক্ষিতে এক সময় রাজশাহী 'সিল্কনগরী' হিসেবে পরিচিত ছিলো। কারণ রেশম শিল্পকে কেন্দ্র করেই রাজশাহী নগরীর উৎপত্তি হয়েছে। রেশমের তৈরি লালপাড় গরদ শাড়ী, গরদের পাঞ্জাবি, আর মটকা শুধু দেশে জনপ্রিয় নয়, বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই রেশম চাষ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচন করতে পারে। রেশম শিল্প পণ্য হিসেবে পরিচিত হলেও এটি একটি কৃষিপণ্য। তবে রেশম চাষ একটি ভিন্ন মাত্রার হয়ে থাকে। ধান, পাট, গম, ভুট্টা কিংবা শাক-সবজি উৎপাদনের মতো রেশম চাষ করা যায় না। কারণ অন্য কৃষিপণ্যের চাষাবাদের মতো রেশম উৎপাদন করা সম্ভব নয়। এর জন্য দু'টি প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন পড়ে। যেমন রেশম চাষের জন্য অপরিহার্য উপাদান তুঁত চাষ, তার জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং রেশম পোকা তথা পলু পালনের জন্য আর এক ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন পড়ে। এ দু'টি পরিবেশই অনুকূলে থাকতে হয় একই সময়। তবে তো রেশম চাষে সফলতা আসে। উল্লেখ্য, পলু পোকার রেশমগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস আমিষ জাতীয় এক প্রাকৃতিক তন্তু তৈরি করে। এই তন্তুই হলো রেশম। পলু পোকার লালনকে আমরা বলি রেশম চাষ। আর পলুর একমাত্র খাদ্য তুঁত পাতা। তাই রেশম চাষের প্রথম কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী তুঁত গাছ লাগানো। বেলে ও কাদামাটি ব্যতীত প্রায় সব ধরনের উর্বর মাটিতে তুঁত চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁআশ মাটি এবং ৬.২০-৬.৮০ অম্লমাত্রার (পিএইচ) মাটিতে ভালো জন্মে। তুঁত গাছ বাড়ির আনাচে-কানাচে, শাক-সবজি বাগানে, রাস্তার ধারে অথবা বাঁধের ধারে লাগানো যায়। তুঁত পাতার ভালো ফলন পেতে হলে সময় মতো সেচ ও পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হয়। রেশম চাষ নিয়ে অনেক কাহিনী, অনেক কিংবদন্তী থাকলেও রেশম সাধারণ মানুষের চাষযোগ্য পণ্য। এই রেশম শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৬ লাখ মানুষ জড়িত রয়েছে। এর অধিকাংশই মহিলা। দেশে বর্তমানে ৪৮ মিলিয়ন টাকা মূল্যের ৪০ মেট্রিক টন কাঁচা রেশম উৎপন্ন হয়। তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। রাজশাহীতে এখন প্রায় ৭৫টি সিল্ক কারখানা গড়ে উঠেছে। বর্তমানে রেশম সুতার চাহিদা ৩৫০ টন। তাই রেশম চাষীদের উৎসাহিত করা উচিত। কেননা বিশ্ববাজারে রেশম আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বস্ত্র সামগ্রী। তাই পলু চাষীদের সহায়তা দেয়া জরুরি। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে রেশম বোর্ড প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রেশম চাষ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানও রেশম চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে দেশের ৩৬টি জেলার ১৯০টি থানায় রেশম চাষের বিস্তার ঘটে। রেশমের চাষ সুষ্ঠুভাবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহীতে রেশম গবেষণা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন অব্যবস্থা ও সমস্যার কারণে রেশম চাষের বিস্তার ঘটানো সম্ভব হয়নি। এ কারণেই অনেক চাষী রেশম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রেশম চাষী খোদাবক্স বলেন, রেশম শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে রেশম চাষীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের সুতা বিদেশী সুতার চেয়ে উন্নত সত্ত্বেও রেশম শিল্প মালিকেরা বিদেশী সুতা ব্যবহার করছে। তাই রেশম চাষীদের গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে। রেশম শিল্প কর্মচারী সমিতির আলাউদ্দিন ভুলু বলেন, 'রেশম কারখানা চালু রাখতে হলে পলু চাষীদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।' বর্তমানে তারা বঞ্চনার শিকার বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনিল চন্দ্র পাল বলেন, 'সরকারি বেসরকারি খাতে রেশম চাষ ও শিল্পের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও দু'টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে রেশম চাষীরা বেশ লাভবান হবে।' এর ফলে তারা রেশম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 
* বাসস ফিচার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন