শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বাজেটে রেশম খাতে বরাদ্দ কমায় হতাশ রাজশাহীর উদ্যোক্তারা


নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বাজেটে রেশম খাতে বরাদ্দ কমায় হতাশ রাজশাহীর উদ্যোক্তারাচলতি ২০১১-২০১২ অর্থবছরের বাজেটে রেশম খাতে গতবারের চেয়ে অর্ধেক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 
এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, রেশম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং রেশমের সুদিন ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বহু আলোচনা-উদ্যোগের কথা বলা হলেও বর্তমান অর্থবছরে এর কোনো প্রতিফলন নেই, যা হতাশাজনক। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রেশমসংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেশম বোর্ড এবং রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চলতি অর্থবছর উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ পেয়েছে আট কোটি ৮১ লাখ টাকা। গত বছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ মোট ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। 
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত আট কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে রেশম বোর্ডের ‘এক্সটেনশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব সেরিকালচার ইন পাবলিক অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাত কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ১৮ লাখ টাকা রাজস্ব ব্যয় এবং এক কোটি ৮২ লাখ টাকা মূলধন ব্যয়। 

এছাড়া রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের জন্য বর্তমান অর্থবছরে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূলধন ব্যয় ৭৫ লাখ টাকা ও রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ টাকা। 
তবে গত বাজেটে রেশম বোর্ডের অধীন ‘রেশম চাষ ও শিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প ছিল। বর্তমান অর্থবছরে সেটি নেই। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ৫৭ লাখ টাকায়। 
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির রাজশাহী জেলা সভাপতি লিয়াকত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে আশাব্যঞ্জক কিছু নেই। রেশমের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। গত বছরের বাজেটে রেশম খাতে যে বরাদ্দ ছিল তার অর্ধেক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বর্তমান অর্থবছরে। 
এছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, যে প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। চাষীদের কাছে যে উপকরণ দেয়া হয়েছে তা অতি নিম্নমানের। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তারা বিদেশে গেছেন শুধু বিভিন্ন ট্রেনিং করতে, কাজের কাজ কিছু হয়নি। এতে রেশম শিল্পেরও কোনো উন্নতি হয়নি।’ 
রেশম খাতে উন্নয়নের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তার বক্তব্য, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দুই শতাংশ হারে ঋণ দিলে অনেকেই এগিয়ে আসবেন রেশম ব্যবসায়।
এ বিষয়ে রেশম শিল্পের উন্নয়নে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চল রেশম চাষের জন্য সবচেয়ে অনুকূল। এ খাতের জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন বিশেষ জরুরি। বাজেটে এ খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল। বরাদ্দ কমে যাওয়ায় রেশম খাতে যে সমস্যা ছিল তা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডান্ড্রির প্রশাসক জিয়াউল হক টুকু বণিক বার্তাকে বলেন, সামগ্রিকভাবে বাজেট ইতিবাচক হলেও রাজশাহীর শিল্প খাত বিশেষ করে রেশম শিল্পের জন্য তা তেমন একটা ইতিবাচক হয়নি। এ খাতে বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে বাড়ানো গেলে রেশম শিল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বাণিজ্য কিছুটা হলেও আলোর মুখ দেখত বলে তিনি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন